ছোট্ট আরিয়ানের বয়স সবে দেড় বছর। ঘরের এদিক থেকে ওদিক তার ছোট ছোট পায়ে ছুটে বেড়ানো দেখতে বাবা-মায়ের আনন্দের সীমা নেই। একদিন আরিয়ানের মা খেয়াল করলেন, আরিয়ান যখন হাঁটে, তখন সে পায়ের পুরো পাতায় ভর না দিয়ে শুধু আঙুলের ওপর ভর দিয়ে উঁচিয়ে হাঁটে। যেন ছোট্ট এক ব্যালে নর্তক! প্রথমে দেখতে ভালো লাগলেও, ধীরে ধীরে মায়ের মনে চিন্তা দানা বাঁধতে শুরু করে। তার সন্তানের হাঁটার এই ভঙ্গি কি স্বাভাবিক?

অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই হাঁটা শেখার শুরুতে পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটা বা 'টো ওয়াকিং' (Toe Walking) বেশ সাধারণ একটি বিষয়। শিশুরা যখন নতুন নতুন হাঁটতে শেখে, তখন তারা তাদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নানা কৌশল চেষ্টা করে। পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটা তারই একটি অংশ হতে পারে। সাধারণত দুই বা তিন বছর বয়সের মধ্যে এই অভ্যাসটি নিজে থেকেই চলে যায় এবং শিশুরা স্বাভাবিকভাবে পায়ের গোড়ালি থেকে পাতা পর্যন্ত ব্যবহার করে বা 'হিল-টু-টো' (Heel-to-toe) ভঙ্গিতে হাঁটতে শুরু করে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি শিশুর বিকাশের একটি স্বাভাবিক পর্যায় এবং এতে চিন্তার কিছু নেই।

কখন একটু ভাবনার কারণ হতে পারে?
যদিও বেশিরভাগ শিশুর জন্য এটি একটি অস্থায়ী পর্যায়, কিছু ক্ষেত্রে এই অভ্যাসটি অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। তাই কয়েকটি বিষয়ের দিকে অভিভাবকদের নজর রাখা জরুরি।

যদি আপনার সন্তানের বয়স তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সে পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটতে থাকে, তবে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। খেয়াল করে দেখুন, শিশুর পায়ের পেছনের মাংসপেশি, যা কাফ মাসল (Calf Muscle) নামে পরিচিত, তা কি অতিরিক্ত শক্ত বা টানটান মনে হচ্ছে? অনেক সময় অ্যাকিলিস টেন্ডন (Achilles Tendon), যা পায়ের গোড়ালিকে কাফ মাসলের সঙ্গে যুক্ত করে, সেটি জন্মগতভাবে ছোট থাকলে শিশুরা পায়ের গোড়ালি মাটিতে ফেলতে পারে না।

এছাড়াও, যদি শিশুটি হাঁটার সময় প্রায়ই পড়ে যায়, তার শরীরের ভারসাম্য রাখতে কষ্ট হয় বা অন্য সমবয়সী শিশুদের মতো সহজে দৌড়াতে বা খেলাধুলা করতে না পারে, তবে এটি কোনো স্নায়ুবিক সমস্যা বা নিউরোমাসকুলার ইমব্যালান্সের (Neuromuscular Imbalance) লক্ষণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy), মাসকুলার ডিস্ট্রফি (Muscular Dystrophy) বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের (Autism Spectrum Disorder) মতো স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবেও টো ওয়াকিং দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে টো ওয়াকিংয়ের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি।

অভিভাবকদের জন্য কিছু কথা:
আপনার সন্তানের হাঁটার ধরণ নিয়ে কোনো সন্দেহ বা উদ্বেগ তৈরি হলে আতঙ্কিত হবেন না। মনে রাখবেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি কোনো গুরুতর বিষয় নয়। তবে, মনের শান্তি এবং আপনার সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য একজন পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের (Paediatric Orthopaedic Specialist) পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। বিশেষজ্ঞরা শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারেন। প্রয়োজনে কিছু হালকা ব্যায়াম, বিশেষ ধরনের জুতা বা ব্রেস ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। খুব কম ক্ষেত্রেই সার্জারির প্রয়োজন হয়। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে আপনার সন্তানের হাঁটার ছন্দ আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং সে তার ছোট্ট পায়ে দ্বিধাহীনভাবে বিশ্বজয়ের পথে এগিয়ে যাবে। আপনার সচেতনতাই পারে শিশুর শারীরিক বিকাশকে মসৃণ ও সুন্দর রাখতে।