রোজ বিকেলের রোদ পড়তেই ছোট্ট রাইসা ছুটে যায় পার্কে—বন্ধুদের সাথে দৌড়ঝাঁপ, হাসাহাসি, আর ছোট্ট ছোট্ট খুশিতে ভরে ওঠে চারপাশ। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মা লক্ষ্য করছেন—রাইসা যেন একটু বেশি হোঁচট খাচ্ছে। কখনো দৌড়াতে গিয়ে, কখনো ধীরে হাঁটতেই—হঠাৎ করে ধপাস! আগে যাকে মাও স্বাভাবিক চঞ্চলতা বলে হাসিমুখেই উড়িয়ে দিতেন, এখন তা বদলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে চিন্তায়।

“সব ঠিক তো? নাকি কিছু সমস্যা হচ্ছে?”

শিশুরা বড় হতে হতে পড়ে যাবে—এটাই স্বাভাবিক। কারণ তারা তখন শিখছে কিভাবে শরীরকে সামলাতে হয়, কিভাবে ভারসাম্য রাখতে হয়। কিন্তু যখন পড়ে যাওয়া নিয়মিত অভ্যাস হয়ে যায়, আর সমবয়সীদের তুলনায় টালমাটাল ভাব বেশি দেখা যায়—তখন সেখানে একটা নরম আলতো সতর্ক সংকেত লুকিয়ে থাকে।

কিছু শিশুর ‘ফ্ল্যাট ফিট’ থাকে—পায়ের তলার আর্চ ঠিকমতো না গড়ে ওঠা। ফলে হাঁটা বা দৌড়ে ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে যায়। আবার কারও হয় ‘ইনটোয়িং’—পায়ের পাতা ভেতরের দিকে ঘুরে যাওয়া—যাতে দৌড়ানোর সময় পা জড়িয়ে গিয়ে পড়ে যাওয়া খুবই সাধারণ।

শুধু পায়ের গঠনই নয়—স্নায়ু ও পেশির সমন্বয়েও সমস্যা থাকতে পারে। যেমন ‘হাইপোটোনিয়া’—যেখানে পেশি ঢিলে থাকে, ফলে জয়েন্ট অতিরিক্ত নরম হয়ে গিয়ে শরীর ধরে রাখা কঠিন হয়। আর ‘ডেভেলপমেন্টাল কোঅর্ডিনেশন ডিসঅর্ডার (DCD)’—যেখানে মস্তিষ্ক ঠিকমতো নড়াচড়ার পরিকল্পনা করতে পারে না—ফলে বাচ্চারা হাঁটাচলায় একটু অগোছালো হয়।

বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে ভিটামিন-ডি ঘাটতি খুব সাধারণ। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়, پেশি টলারেন্স কমে, আর শিশুর ভারসাম্য নষ্ট হয়। সঙ্গে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা বা কানের ভেতরের ভেস্টিবুলার সিস্টেমে সমস্যা থাকলেও শিশু বারবার পড়তে পারে।

✨ অভিভাবক হিসেবে কী করবেন?
শুধু কতবার পড়ছে—তা নয়—কীভাবে পড়ছে, কোন পরিস্থিতিতে পড়ছে, কোন দিক বেশি হেলে পড়ছে—এসব লক্ষ্য করুন। এই ছোট ছোট পর্যবেক্ষণই বিশেষজ্ঞকে সঠিক কারণ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

শিশুর দুরন্তপনা যেন ব্যথা বা ভয় হয়ে না দাঁড়ায়—সেজন্য আপনার সচেতনতা সবচেয়ে বড় শক্তি। মনেই যদি একটুও সন্দেহ আসে—দ্বিধা না করে একজন শিশু অস্থিবিদ্যা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপই আপনার শিশুর হাসিখুশি, নিরাপদ আর আত্মবিশ্বাসী ভবিষ্যতের ভিত্তি।